ফাইল ছবি
১৬ই ডিসেম্বর, মহান বিজয় দিবস। উৎসবের এই দিনে নারায়ণগঞ্জ শহরের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকা বিজয় স্তম্ভটি কেবল একটি স্থাপত্য নয়; এটি লক্ষ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগ এবং একটি জাতির উত্থানের নীরব সাক্ষী।
গভীর গবেষণায় দেখা যায়, এই স্তম্ভটি কেবল স্বাধীনতা ঘোষণা করে না, এটি এই অঞ্চলের মানুষের প্রতিরোধ, বীরাঙ্গনাদের ত্যাগ এবং গণমানুষের অংশগ্রহণের এক অসামান্য প্রতীক।
১৯৭১ সালে নারায়ণগঞ্জ ছিল ঢাকা শহরের প্রবেশদ্বার এবং দেশের প্রধান শিল্প ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র। শীতলক্ষ্যার ডকইয়ার্ড এবং ঢাকা-চট্টগ্রাম সংযোগকারী রেল ও সড়কপথের কারণে পাকবাহিনীর কাছে এই শহরের কৌশলগত গুরুত্ব ছিল অপরিসীম। ফলস্বরূপ, পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী এখানে তাদের শক্ত ঘাঁটি স্থাপন করে এবং স্থানীয় জনসাধারণের উপর চালায় নির্মম অত্যাচার।
এই রক্তক্ষয়ী পরিস্থিতিতে, শহরের ছাত্র, শ্রমিক, এবং সাধারণ মানুষই ছিল প্রতিরোধের প্রধান শক্তি। গেরিলা দলগুলো শহরের ভেতরে ও বাইরে ছোট ছোট আক্রমণ চালিয়ে পাকবাহিনীকে অস্থির করে তোলে। সেই ভয়াবহ ৯ মাসের পর, যখন ১৬ই ডিসেম্বরের ভোরে হানাদাররা চূড়ান্তভাবে আত্মসমর্পণ করে, তখন নারায়ণগঞ্জের মানুষ স্বস্তি ও আনন্দের এক মিশ্র অনুভূতি নিয়ে স্বাধীনতার সূর্য দেখে।
এই স্তম্ভের পাদদেশে যখন সর্বস্তরের মানুষ ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায়, তখন তা কেবল শহীদদের স্মরণ করা নয়, বরং মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে বুকে ধারণ করে একটি সমৃদ্ধ দেশ গড়ার প্রতিজ্ঞা পুনর্ব্যক্ত করা। নারায়ণগঞ্জের বিজয় স্তম্ভ তাই শুধু ইতিহাসের নীরব সাক্ষী নয়, এটি ভবিষ্যতের পথনির্দেশক।

