মাশুকুল ইসলাম রাজীব
মানুষের স্বাধীনভাবে কথা বলা ও চলাফেরার আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়নি উল্লেখ করে নারায়ণগঞ্জ জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাশুকুল ইসলাম রাজীব বলেন, আজ অনেক সাহসী মানুষও ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়ছে এবং গুপ্ত রাজনীতির একটি পুরনো ধারা আবার দৃশ্যমান হচ্ছে।
রোববার (১৪ ডিসেম্বর) সকালে নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। বক্তব্যের শুরুতে জুলাই যোদ্ধা ওসমান হাদির ওপর সংঘটিত নৃশংস হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানান মাশুকুল ইসলাম রাজিব। তিনি বলেন, বিভিন্ন গণমাধ্যম সূত্রে জানা যাচ্ছে, হামলাকারীরা ঘটনার ১০ থেকে ১৫ দিন আগেও হাদির সঙ্গে চলাফেরা ও প্রচারণায় যুক্ত ছিল, যা সমাজের জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক ও এলার্মিং।
শহীদ বুদ্ধিজীবী হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে জেলা বিএনপির এই নেতা বলেন, ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর জাতিকে মেধাশূন্য করার সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনা থেকেই বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করা হয়েছিল। এর ফলে জাতির অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সাংবাদিক, চিকিৎসকসহ বিভিন্ন পেশার মানুষের মধ্যে দীর্ঘস্থায়ী ভীতির পরিবেশ সৃষ্টি হয় এবং অপরাধীদের বিচার নিশ্চিত করার যে সাহসিকতা থাকা দরকার ছিল, তা ভেঙে পড়ে। এর কারণেই জাতি কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারেনি বলে মন্তব্য করেন তিনি।
বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে মাশুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, আন্দোলন সংগ্রামে সক্রিয় নেতাকর্মীদের মধ্যেই এখন পারস্পরিক অসহযোগিতা ও বিষোদ্গারের মানসিকতা তৈরি হচ্ছে। ক্ষমতায় যাওয়ার অস্থিরতা থেকেই এমন পরিস্থিতির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। অন্যের ওপর দোষ চাপানোর পরিবর্তে নিজেদের সংশোধনের মানসিকতা আরও গভীরভাবে গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জের রাজনৈতিক পরিবেশ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, কিছুটা গর্বের সঙ্গেই বলা যায়, এ জেলার রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মধ্যে সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে, যা ইতিবাচক। তবে জাতীয় পর্যায়ের অগোছালো বক্তব্য, মন্তব্য ও চিন্তাভাবনার বহিঃপ্রকাশ সমাজে নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালনের উদ্দেশ্যের কথা স্মরণ করে মাশুকুল ইসলাম রাজিব বলেন, প্রতি বছর ১৪ ডিসেম্বর যে লক্ষ্য ও চেতনা সামনে রেখে দিবসটি পালন করা হয়, সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নে আমাদের ভূমিকা আরও জোরদার করা প্রয়োজন।
প্রশাসনের উদ্দেশে তিনি বলেন, রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা সবসময় সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু নির্বাচনকে সামনে রেখে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন থানা থেকে লুট হওয়া অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয়টি খুবই সীমিত পরিসরে দৃশ্যমান। দু চারটি অস্ত্র উদ্ধার মানুষের মধ্যে আশ্বস্ততার পরিবর্তে হতাশা ও আতঙ্ক বাড়াচ্ছে। তিনি বলেন, এখন গাড়ি বাদ দিয়ে রিকশায় চলাচলেও মানুষের মধ্যে ভয় কাজ করছে, যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। এ বিষয়ে প্রশাসনকে আরও সজাগ ও যত্নশীল হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. রায়হান কবিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. এ এফ এম মুশিউর রহমান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মো. আলমগীর হুসাইন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও অপারেশন) তারেক আল মেহেদী, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, মহানগর জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মইনুদ্দিন আহমাদ, বর্তমান আমীর মাওলানা আবদুল জব্বার, গণসংহতি আন্দোলন জেলা সমন্বয়কারী তরিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট আব্দুল্লাহ আল আমিন, ইসলামী আন্দোলন জেলা সভাপতি দ্বীন ইসলাম, মহানগর সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, খেলাফত মজলিসের নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের প্রার্থী ইলিয়াস আহমদ, গণ অধিকার পরিষদ জেলা সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার নাহিদ, মহানগর সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আরিফ ভূঁইয়া, জাতীয় যুবশক্তির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য নিরব রায়হানসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।

