
সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে লালন উৎসব
ফকির লালন সাঁইয়ের ২৫০তম জন্মবর্ষ উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে শুরু হয়েছে দুইদিন ব্যাপী ‘লালন উৎসব’।
শুক্রবার (২৪ জানুয়ারি) বিকেলে শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়েছে।
উৎসবের প্রতিপাদ্য বিষয় লালন সাঁই এর বাণী ‘এমন সমাজ কবে গো সৃজণ হবে, যে দিন হিন্দু মুসলমান বৌদ্ধ খ্রিস্টান জাতি গোত্র নাহি রবে’।
সংগঠনের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম কাজলের সভাপতিত্বে ধীমান সাহা জুয়েলের সঞ্চালনায় উৎসবের উদ্বোধন করেন বাউল ফকির পিয়ার সাঁই। উৎসব আয়োজন ও বর্তমান কর্তব্য নিয়ে বক্তব্য রাখেন সংগঠনের উপদেষ্টা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।
উৎসবে কুষ্টিয়া ও জোটভুক্ত সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ লালনের সঙ্গীত পরিবেশন করেন। শনিবার কুষ্টিয়াসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের লালন ভক্তবৃন্দ ও লালন সঙ্গীতের শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করবেন।
পিয়ার সাঁই বলেন, লালনের গান ও বাণী প্রচারের মধ্য দিয়ে আমরা সকল-মানবের সম্মিলনে মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করতে পারি। যে সমাজে মানুষকে জাত-পাতের নামে বিভক্ত করা হবে না, ছোট করা হবে না, অপমান করা হবে না। মানুষের সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই ছিল লালন সাঁইজির স্বপ্ন, আমাদেরও সেই স্বপ্ন।
রফিউর রাব্বি বলেন, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে মানুষে মানুষে বিভাজন বৃদ্ধি পেয়েছে। অথচ হওয়ার কথা ছিল উল্টো। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সমাজে সকল বৈষম্যের বিরুদ্ধে, বিভাজনের বিরুদ্ধে। আমরা একাত্তরে যে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধ করেছিলাম চব্বিশের আন্দোলন সে অসমাপ্ত কাজ সমাপ্ত করার প্রতিশ্রুতি, একটি মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি, সকল ধর্মের স্বাধীনতা শুধু নয়, সকল মত ও পথের স্বাধীনতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি চব্বিশের ছাত্র-গণঅভ্যুত্থান। আউল-বাউল, সুফি, সন্ন্যাসী সকলের মত ও পথের স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার জন্য সকল আন্দোলন। শ্রেষ্ঠত্ব বা সংখ্যাগরিষ্ঠের অজুহাতে কোন মতবাদকে দমন করা যাবে না। রাষ্ট্র সে স্বাধীনতা নিশ্চিত করবে।
তিনি বলেন, কিন্তু আমরা দেখলাম অর্ধ-শতাধিক মাজার-খানকা ভেঙে ফেলা হলেও, আক্রান্ত হলেও সরকারের লজ্জাজনক নীরবতা। ধর্ম রক্ষার নামে যুগে যুগে সমাজে ধর্মান্ধগোষ্ঠী ধর্ম, মানবতার ওপর আঘাত হেনেছে। লালনের লড়াই মানবতা প্রতিষ্ঠার লড়াই। মানুষকে মানুষের মর্যাদায় মহীয়ান করার লড়াই, যে লড়াইয়ের মধ্যদিয়ে মহামানবের মহাযাত্রা অব্যাহত রয়েছে।