
গণসংযোগ
নারায়ণগঞ্জ মহানগরের মন্ডলপাড়ায় শনিবার (১১ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর অনুষ্ঠিত হয় বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স আয়োজিত অগ্নিনিরাপত্তা বিষয়ে গণসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য “গণসংযোগ” এর আয়োজন করা হয়। “দি লাইফ সেভিং ফোর্স” হিসেবে পরিচিত ফায়ার সার্ভিস এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ, ব্যবসায়ী, ও ভবন মালিকদের মধ্যে বিদ্যুৎ ব্যবহারে নিরাপত্তা বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
অনুষ্ঠানে প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট ডিরেক্টর মোঃ আব্দুল্লাহ আল আরেফিন বলেন, আমাদের দেশে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডের বেশিরভাগই ঘটে বিদ্যুৎ সংক্রান্ত ত্রুটি বা বৈদ্যুতিক গোলযোগের কারণে। তাই বিদ্যুৎ ব্যবহারে সচেতনতা এবং মানসম্মত সরঞ্জাম ব্যবহারই দুর্ঘটনা রোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
তিনি আরও বলেন, বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ইলেকট্রিক অ্যাক্ট ১৯১০ এবং ইলেকট্রিক রুলস ১৯৩৯ জানা এবং মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি।
আরেফিন জানান, গুণগত মান বজায় রাখতে বিএসটিআই অনুমোদিত বৈদ্যুতিক তার, সুইচ, ব্রেকার ও অন্যান্য সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে, কারণ নিম্নমানের সরঞ্জামই অগ্নিকাণ্ডের অন্যতম কারণ।
তিনি বলেন, ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার ক্ষেত্রে অনুমোদিত ও যোগ্য বিদ্যুৎ প্রকৌশলী নিয়োগ করা আবশ্যক। বহুতল ভবন নির্মাণের সময় তার সক্ষমতা অনুযায়ী বিদ্যুৎ সংযোগ নিশ্চিত করতে হবে। একইভাবে শিল্প কারখানা বা বাণিজ্যিক ভবনে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণের সময় অবশ্যই এসএলডি বা সিঙ্গেল লাইন ডায়াগ্রাম প্রণয়ন করতে হবে।
তিনি বলেন, বাসাবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বৈদ্যুতিক স্থাপনা থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে ভবন নির্মাণ করা প্রয়োজন। প্রতিটি সার্কিটে উপযুক্ত ফিউজ ব্যবহার করতে হবে এবং সকল সুইচ যেন সরবরাহ লাইনের ফেজের সাথে সঠিকভাবে সংযুক্ত থাকে তা নিশ্চিত করতে হবে। ঘরে ব্যবহৃত ফ্রিজ, টেলিভিশন, কম্পিউটার, ওভেন ইত্যাদি যন্ত্রপাতি অবশ্যই সঠিকভাবে আর্থিং করা থাকা জরুরি। ভবন নির্মাণের সময় নিকটবর্তী বৈদ্যুতিক লাইন থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হবে এবং বিদ্যুৎ লাইনের পাশে গাছ লাগানোর সময়ও ওভারহেড লাইনের নিরাপদ দূরত্ব নিশ্চিত করতে হবে।
আরেফিন বিকল্প বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ক্ষেত্রেও সাবধানতার পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, জেনারেটর স্থাপনের সময় সঠিক রেটিংয়ের চেঞ্জওভার সুইচ ব্যবহার করতে হবে এবং সেটি অবশ্যই দক্ষ অপারেটর দ্বারা পরিচালনা করা উচিত। কোনো ভবন বা শিল্প স্থাপনার রক্ষণাবেক্ষণ ও মেরামতের কাজ অনুমোদিত ও দক্ষ ব্যক্তি ব্যতীত অন্য কারও করা যাবে না। কাজ শুরুর আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করা হয়েছে কিনা তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত হতে হবে এবং প্রয়োজনে গ্রাউন্ডিং করতে হবে।
তিনি আরও বলেন, কাজের সময় ভেজা হাতে বৈদ্যুতিক সুইচ বা যন্ত্র ব্যবহার করা বিপজ্জনক। কর্মীদের উপযুক্ত পোশাক ও সুরক্ষা সরঞ্জাম ব্যবহার করতে হবে। বহনযোগ্য মই ব্যবহার করার সময় সেটি ধরে রেখে কাজ করতে হবে যাতে পিছলে পড়ে কোনো দুর্ঘটনা না ঘটে। ব্যবহারের আগে প্রতিটি যন্ত্রপাতি পরীক্ষা করে দেখতে হবে সেটি সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা, ত্রুটিপূর্ণ যন্ত্রপাতি অবিলম্বে বাদ দিতে হবে।
আরেফিন নিরাপদ দূরত্বের বিষয়ে বলেন, বিদ্যুৎ সংযোগ আছে এমন লাইন বা যন্ত্রপাতি নিয়ে কাজ করার সময় পরিবাহী বস্তু নিরাপদ দূরত্বে রাখতে হবে। ১১ কেভির লাইনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম ২ ফুট এবং ৩৩ কেভির জন্য ন্যূনতম ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক।
তিনি বলেন, নিরাপত্তা কোনো বিকল্প নয়, এটি জীবনযাত্রার অংশ হওয়া উচিত। আমরা যদি সামান্য সচেতন হই, তবে বড় দুর্ঘটনা সহজেই এড়ানো সম্ভব।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, ভবন মালিক ও সাধারণ মানুষ ফায়ার সার্ভিসের নির্দেশনাকে স্বাগত জানান। তারা জানান, এই ধরণের সচেতনতামূলক কর্মসূচি নিয়মিত আয়োজন করলে অগ্নি দুর্ঘটনা অনেকাংশে হ্রাস পাবে।
অনুষ্ঠানের শেষে ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তারা উপস্থিতদের মাঝে বৈদ্যুতিক নিরাপত্তা বিষয়ক লিফলেট বিতরণ করেন এবং সবাইকে সতর্ক বার্তা দেন, নিরাপদ বিদ্যুৎ, নিরাপদ জীবন- সচেতন হোন, দুর্ঘটনা রোধ করুন।