শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

|

বৈশাখ ৫ ১৪৩১

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সন্তান লাভের দোয়া ও আমল

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১৭:৪৫, ২৯ জানুয়ারি ২০২২

সন্তান লাভের দোয়া ও আমল

প্রতীকী ছবি

বিয়ের পর অনেক দম্পতির জীবনে কয়েক বছর চলে যায়। কিন্তু কোনো সন্তান জন্ম লাভ করে না। বিভিন্ন রকম চিকিৎসার পরও তারা হতাশ হয়ে পড়েন। নানা দুশ্চিন্তায় তারা নানা ধরনের মাধ্যম গ্রহণ করতে চান। অথচ আল্লাহর কাছে সন্তান চাওয়া সর্বোত্তম।

যারা নিঃসন্তান, তারা সন্তান লাভের দোয়া ও আমল সম্পর্কে জানতে চান। তাই তাদের জেনে রাখার সুবিধার্থে এখানে ৮টি আমল বা দোয়ার কথা উল্লেখ করা হলো।

এক. সন্তান-সন্ততি দানের মালিক কেবল আল্লাহ

সবার মনে রাখতে হবে যে, সন্তান-সন্ততি দানের ক্ষমতা একমাত্র আল্লাহ তাআলার। আল্লাহ যাকে সন্তান দান করেন— কোনো অসুস্থতা ও দুর্বলতা কিংবা কোনো সমস্যাই তার জন্য বাঁধা হয়ে দাড়ায় না। আর আল্লাহ তাআলা যাকে সন্তান দান করেন না, অতি তুচ্ছ কারণেই সে সন্তান লাভ করতে ব্যর্থ হয় ।

আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আল্লাহ যাকে ইচ্ছা কন্যা সন্তান দান করেন, যাকে ইচ্ছা পুত্র সন্তান দান করেন অথবা ছেলে-মেয়ে উভয়ই দান করেন। আবার যাকে ইচ্ছে বন্ধ্যা করেন।’ (সুরা আশ-শুরা, আয়াত : ৫০)

সুতরাং সন্তান চাইতে হবে কেবল আল্লাহর কাছেই। আপনি নিবিষ্ট মনে আপনার মত করে নিজের ভাষায় তারই কাছে নেক সুস্থ ও সুন্দর সন্তান কামনা করে দোয়া করতে থাকুন। তিনি আপনার ডাকে সাড়া দিয়ে অবশ্যই সন্তান দান করবেন।

দুই. আল্লাহর নবী জাকারিয়া (আ.)-এর দোয়া

জাকারিয়া (আ.) বয়োবৃদ্ধ হয়ে যাওয়ার পরও নিঃসন্তান ছিলেন। মারিয়াম (আ.) বায়তুল মোকাদ্দাসে জাকারিয়া (আ.)-এর তত্ত্বাবধানে ছিলেন। একদিন তিনি দেখলেন, আল্লাহ তাআলা মৌসুম ছাড়াই মারইয়াম (আ.)-কে ফল দান করেছেন। তখন তার মনে সন্তান লাভের সুপ্ত আকাঙ্ক্ষা জেগে উঠল। তিনি ভাবলেন যে, যে আল্লাহ বিনা-মৌসুমে ফল দিতে পারেন, সে আল্লাহ বৃদ্ধদম্পতিকেও সন্তান দান করতে পারেন। তাই তিনি আল্লাহর দরবারে দোয়া করলেন—

আরবি :

رَبِّ هَبْ لِي مِن لَّدُنْكَ ذُرِّيَّةً طَيِّبَةً إِنَّكَ سَمِيعُ الدُّعَاء

উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিল্লাদুনকা যুরিরয়্যাতান ত্বাইয়্যিবাহ, ইন্নাকা সামিউদ দুআ। 

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক! তোমার পক্ষ থেকে আমাকে পূতপবিত্র সন্তান দান করো। নিশ্চয়ই তুমি প্রার্থনা কবুলকারী।’ (সুরা : আলে ইমরান, আয়াত : ৩৮)।

তিন. দোয়ায় বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান লাভ হয়

জাকারিয়া (আ.) মহান আল্লাহর শরণাপন্ন হয়েছেন। তিনি সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর বিশেষ করুণা চেয়েছেন। মহান আল্লাহ তার দোয়া কবুল করেছেন। এতে বোঝা যায়, নিঃসন্তান দম্পতির জন্য আশার আলো সব সময় জ্বলে থাকে। আল্লাহ চাইলে বৃদ্ধ বয়সেও সন্তান হতে পারে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন নিঃসন্তান মাতা-পিতাকে এ দোয়া শিখিয়েছেন— 

رَبِّ لَا تَذَرْنِى فَرْدًا وَأَنتَ خَيْرُ ٱلْوَٰرِثِينَ

উচ্চারণ : রব্বি লা-তাযারনি ফারদাঁও ওয়া আন্তা খাইরুল্ ওয়ারিছিন।

অর্থ : হে আমার রব, আমাকে একা রেখো না। তুমি তো সর্বোত্তম উত্তরাধিকারী।’ (সুরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৯)।

অতএব, আপনিও দোয়াটি করতে পারেন। ইনশাআল্লাহ আল্লাহ আপনাকে নেক সন্তান দান করবেন।

চার. সন্তান লাভে ইবরাহিম (আ.)-এর দোয়া

আল্লাহর অন্যতম প্রিয় নবী ইবরাহিম (আ.)। আল্লাহ তাআলার নিকট দোয়া করেছিলেন— সৎ পুত্র সন্তানের জন্য। আল্লাহ তাআলা তার দোয়া কবুল করেন। তাকে নেক পুত্র সন্তান দান করেন। এর মাধ্যমে আল্লাহ তাআলা শিক্ষা দিয়েছেন, যাতে বান্দা এ দোয়ার মাধ্যমে তাঁর নিকট সন্তান কামনা করতে পারে।

দোয়াটি এই-

رَبِّ هَبْ لِي مِنَ الصَّالِحِينَ

উচ্চারণ : রাব্বি হাবলি মিনাস সলেহিন।

অর্থ : হে আমার প্রভু! আমাকে এক সৎপুত্র দান করুন।’ (সুরা সাফফাত, আয়াত : ১০০)

পাঁচ. আল্লাহর খাঁটি বান্দাদের দোয়া

আল্লাহর প্রিয় বান্দাদের পরিচয়ে অনেক গুণাগুণের কথা কোরআনে বলা হয়েছে। তন্মধ্যে অন্যতম হলো- তারা পুণ্যবান স্ত্রী ও সন্তানের জন্য দোয়া করেন। কোরআনে বর্ণিত দোয়াটি আপনিও করতে পারেন। ইনশা-আল্লাহ আল্লাহ আপনাকে সন্তান দিয়ে সুখী করবেন।

দোয়াটি হলো-

رَبَّنَا هَبْ لَنَا مِنْ أَزْوَاجِنَا وَذُرِّيَّاتِنَا قُرَّةَ أَعْيُنٍ وَاجْعَلْنَا لِلْمُتَّقِينَ إِمَامًا

উচ্চারণ : রাব্বানা-হাবলানা-মিন্ আয্ওয়াজ্বিনা ওয়া যুররিয়্যা-তিনা-কুররাতা আ’ইয়ুন, ওয়া জা’আল্না-লিল মুত্তাকিনা ইমামা।

অর্থ : হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের জীবনসঙ্গীর পক্ষ থেকে এবং আমাদের সন্তানের পক্ষ থেকে আমাদের জন্যে চোখের শীতলতা দান দান করুন এবং আমাদেরকে আল্লাহভীরুদের জন্যে আদর্শস্বরূপ দান করুন। (সুরা ফুরকান, আয়াত : ৭৪)

ছয়. ইস্তেগফার করলে সন্তান ও প্রাচুর্য লাভ হয়

নুহ (আ.)- এর ব্যাপারে আল্লাহর বাণী দেখুন। ইস্তেগফারের ব্যাপারে বলা হয়েছে, ‘তিনি তোমাদের উপর অজস্র বৃষ্টিধারা ছেড়ে দেবেন। তোমাদের ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্ততি বাড়িয়ে দেবেন। তোমাদের জন্যে উদ্যান স্থাপন করবেন এবং তোমাদের জন্যে নদীনালা প্রবাহিত করবেন।(সুরা নুহ, আয়াত : ১২)

এছাড়াও হুদ (আ.)-এর ঘটনায় মহান আল্লাহর বাণী দেখুন। অধিক ইস্তেফারের ফলাফল বলতে গিয়ে আল্লাহ তাআলা বলেছেন, ‘তোমাদের শক্তির উপর শক্তি বৃদ্ধি করবেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত : ৫২)

সাত. নিয়মিত ইস্তিগফারে অকল্পনীয় সাহায্য পাবেন

আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নিয়মিত ইস্তেগফার করবে, আল্লাহ তার সব সংকট থেকে উত্তরণের পথ বের করে দেবেন। সব দুশ্চিন্তা মিটিয়ে দেবেন এবং অকল্পনীয় উৎস থেকে তার রিজিকের সংস্থান করে দেবেন। (আবু দাউদ, হাদিস : ১৫২০)

সুতরাং আপনিও বেশি করে ইস্তেগফার করুন। ইনশাআল্লাহ আপনার সন্তান না হওয়ার দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে। আল্লাহ আপনাকে উত্তম সন্তান দান করবেন।

আট. সহবাসের সময় দোয়া পড়া

আল্লাহ চাইলে— সহবাসের সময় দোয়া আপনার সন্তান লাভের মনোবাসনা পূরণ হতে পারে। আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যখন তোমাদের কেউ আপন স্ত্রীর সঙ্গে মিলিত হওয়ার ইচ্ছা করে তখন উক্ত দোয়া পড়ে যেন মিলিত হয়। এ মিলনে যদি তাদের কিসমতে কোনো সন্তান আসে, সে সন্তানকে শয়তান কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।’ (বুখারি, হাদিস : ৬৩৮৮)

সহবাসের দোয়াটি হলো-

بِسْمِ اللَّهِ ، اللَّهُمَّ جَنِّبْنَا الشَّيْطَانَ ، وَجَنِّبْ الشَّيْطَانَ مَا رَزَقْتَنَا

উচ্চারণ : বিসমিল্লাহি আল্লাহুম্মা জান্নিবনাশ শায়তানা, ওয়া জান্নিবিশ শায়তানা মা রাজাকতানা।

অর্থ : হে আল্লাহ! আপনার নামে শুরু করছি, আপনি আমাদের নিকট হতে শয়তানকে দূরে রাখুন। আমাদের এ মিলনের ফলে যে সন্তান দান করবেন, তা হতেও শয়তানকে দূরে রাখুন।’

পরিশেষে মনে রাখুন যে, কোনো মানুষের কাছে সন্তান কামনা করা যাবে না। সন্তান লাভের জন্য অবৈধ ও অনৈসলামিক উপায়ও অবলম্বন করা যাবে না। নিঃসন্তান দম্পতির উচিত— আল্লাহর ওপর ভরসা করে উল্লিখিত দোয়া পাঠ করা। আমরা আপনার জন্য দোয়া করি, আল্লাহ আপনাকে নেক সুস্থ সুন্দর সন্তান দান করুন।