বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

|

পৌষ ২ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

রূপগঞ্জ সারা দেশে উদাহরণ হবে: দিপু ভূঁইয়া

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ২০:৫৪, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

রূপগঞ্জ সারা দেশে উদাহরণ হবে: দিপু ভূঁইয়া

ফাইল ছবি

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনের বিএনপি মনোনীত প্রার্থী মোস্তাফিজুর রহমান ভূঁইয়া দিপু ঐতিহ্যবাহী ভূঁইয়া পরিবারের সন্তান। তিনি একাধারে রাজনীতিবিদ, সফল ব্যবসায়ী, সমাজসেবক, সংগঠন ও ক্রীড়াপ্রেমী। তিনি বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, জেলা বিএনপির প্রথম যুগ্ম আহবায়ক, নারায়ণগঞ্জ চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ড্রাস্ট্রির সভাপতি, পূর্বাচল ক্লাবের নির্বাহী সভাপতি, গাউছিয়া করপোরেশন চেয়ারম্যান। তার সঙ্গে বর্তমান রাজনৈতিক বিষয, নির্বাচন ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। সাক্ষাৎকারটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।

এবারই প্রথম আপনি সংসদ নির্বাচনে দলের মনোনয়ন পেলেন। দল আপনাকেই বেছে নিল কেন?
দিপু ভূঁইয়া: আমরা বিগত সতেরো বছর মাঠে থাকার চেষ্টা করেছি। দলটা আমাদের রক্তের সাথে মিশে গেছে। এটার জন্য আমি ধন্যবাদ জানাই দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানকে। তারা আমাকে বেছে নিয়েছেন রূপগঞ্জ থেকে নির্বাচন করার জন্য। আমি মনে করি, তারা অনেক বিবেচনা করেই দলের এই দায়িত্ব আমাকে দিয়েছেন। দলের দুর্দিনে ছিলাম, এখন দলের হয়ে যেন রূপগঞ্জের কিছু উপকার করতে পারি। রূপগঞ্জে রাস্তাঘাটের সমস্যা রয়েছে, মাদকের সমস্যা রয়েছে। এই সমস্যাগুলো সমাধান করে রূপগঞ্জবাসীর মনের মাঝে যেন গেঁথে থাকতে পারি, এজন্যই আমাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিতে হবে, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেবে। কারণ কিছু লোক গাড়িতে ঘুরবে আর পাশের বাসার শিক্ষিত মানুষ না খেয়ে থাকবে, এটা হবে না।

নারায়ণগঞ্জ-১ (রূপগঞ্জ) আসনে গত দুই নির্বাচনে যিনি মনোনয়ন পেয়েছিলেন, সেই কাজী মনিরুজ্জামান সাহেবের পরিবর্তে দল আপনাকে বেছে নিল কেন? দল আপনার ওপর যে আস্থা রাখল, তার প্রতিদান কীভাবে দেবেন?
দিপু ভূঁইয়া: কাজী মনির সাহেব অনেক অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ। তাকে যেকোনো কারণেই হোক দল দায়িত্ব দেয়নি। তিনি দলের লোক, তিনি সবসময় মানুষের পাশে ছিলেন এবং থাকবেন। আমরাও যারা কাজ করবো, উনাকে সঙ্গে নিয়েই আমরা কাজ করতে চাই।

প্রথম নির্বাচন হিসেবে আপনার চ্যালেঞ্জগুলো কি আর কৌশল কী হবে?
দিপু ভূঁইয়া: নির্বাচনের চ্যালেঞ্জের চেয়ে বেশি হল রূপগঞ্জবাসীর চ্যালেঞ্জ। রূপগঞ্জ ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন। এখানে কিছু অসৎ ব্যবসায়ী জায়গা দখলের চেষ্টা করছে, কাগজ থাকুক আর না থাকুক। তারা এত যন্ত্রণা করছে রূপগঞ্জের মানুষকে। মানুষ এখানে থাকবে, এটাই চিন্তার বাইরে চলে যাচ্ছে। রূপগঞ্জের মানুষ যেন তাদের পৈতৃক জায়গায় থাকতে পারে, এটা নিশ্চিত করা আমাদের প্রথম দায়িত্ব।

দেশের অন্যতম বড় বড় ইন্ডাস্ট্রি এই রূপগঞ্জে। কিন্তু এখানে যে পড়াশোনা জানে, তারও চাকরি নেই, যে জানে না তারও চাকরি নেই। এই ইন্ডাস্ট্রি চাকরি দিচ্ছে না। আমার নারায়ণগঞ্জের মানুষকে চাকরি দিতে হবে, যোগ্যতা অনুযায়ী চাকরি দেবে। কারণ কিছু লোক গাড়িতে ঘুরবে আর পাশের বাসার শিক্ষিত মানুষ না খেয়ে থাকবে, এটা হবে না।

দল হিসেবে বিএনপি দীর্ঘদিন নানা কর্মসূচিতে ছিল। বর্তমান নাজুক পরিস্থিতিতে নির্বাচন কতটা চ্যালেঞ্জিং হবে?
দিপু ভূঁইয়া: মানুষ সতেরো বছর ধরে তার পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে পারেনি। তরুণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে যেতেই পারেনি। বিএনপি চায় মানুষ যেন তার পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে। মানুষের ম্যান্ডেট নিয়েই বিএনপি ক্ষমতায় আসতে চায়। এখনও আমরা মানুষের ভোটাধিকারের জন্য লড়ছি। তবে আমরা আশাবাদী, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে এবং গণতান্ত্রিক সরকার দেশ পরিচালনা করবে।

পাঁচ আগস্টের পর বাংলাদেশে হঠাৎ অনেক সন্ত্রাসীকে মুক্তি দিয়ে দিয়েছে। মাদকের সমস্যার দিকে তারা হাত দেয়নি। এত অস্ত্র লুট হলো, সেগুলো উদ্ধার করতে পারেনি। বিগত সরকারের আমলে সন্ত্রাসীদের ব্যবহৃত অস্ত্রও উদ্ধার হয়নি। এগুলো না করলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাবে। বর্তমানে আর্মি ও পুলিশ কাজ করছে। এগুলো ঠিক করতে না পারলে সামনে পরিস্থিতি খারাপ হতে পারে।

রূপগঞ্জের রাজনৈতিক পরিস্থিতি কেমন, ভোটারদের কেমন সাড়া পাচ্ছেন?
দিপু ভূঁইয়া: রূপগঞ্জের মানুষ অধীর আগ্রহে বসে আছে তার পছন্দের মানুষকে ভোট দিতে। সবাই ভোটের অপেক্ষায় আছে। রূপগঞ্জ সারা দেশে উদাহরণ হবে। এখানে নব্বই শতাংশ ভোটার উপস্থিতি থাকবে বলে আশা করছি।

আমাদের পরিবার হলো ব্যবসায়ী পরিবার। রাজনৈতিকভাবেও আমরা সবসময় নারায়ণগঞ্জবাসীর পাশে ছিলাম। ছোটবেলা থেকে আমি দেখে এসেছি, মানুষের সাথে কীভাবে মিশতে হবে। আমি দেখেছি আমার বাবা-চাচারা ক্রাইসিস সময়ে কীভাবে ম্যানেজ করেছে। মানুষের সাথে মেশার বিষয়টা আমি ছোট থেকেই দেখে এসেছি।

রূপগঞ্জের আরেকটি বড় সমস্যা হলো অপরিকল্পিত আবাসন প্রকল্প। এ সমস্যা থেকে মুক্তির জন্য কী পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন?
দিপু ভূঁইয়া: রূপগঞ্জে চেয়ারম্যান বা পৌরসভার মেয়র কাগজ দিয়ে দিয়েছেন—এতটুকু জায়গা অমুক কোম্পানির। এই কাগজের বলে তারা জমি ভরাট করছে। তারা সাইনবোর্ড ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন কাজ করছে। আমাদের কাজ হলো, কিসের ভিত্তিতে এই অনুমতি দেওয়া হলো, সেটা আমাদের দেখতে হবে। জায়গা না কিনে জায়গা কীভাবে বিক্রি বা ভরাট করে?

আমাদের এখানে স্কুল, কলেজ, মন্দির, মসজিদ, কবরস্থান লাগবে। এগুলো কেউ করছে না। তাহলে তো এটা আরেকটা ডেড সিটি হয়ে পড়বে। আমরা সকলকে নিয়ে এ বিষয়ে বসবো।

রূপগঞ্জে যত ইন্ডাস্ট্রি, এর ত্রিশ শতাংশও যদি চাকরি দেয়, তাহলে রূপগঞ্জে আর বেকার সমস্যা থাকবে না। বেকারত্বের কারণেই ছিনতাই, সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্ম বাড়ছে।
 
রূপগঞ্জের যুব সমাজের কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে আপনার কোনো ভূমিকা থাকবে কি না?
দিপু ভূঁইয়া: রূপগঞ্জ শিল্প এলাকা। এখানকার যুবকেরা যেন এখানে চাকরি পায়, সেজন্য আমরা কথা বলেছি। আমরা তাদের অনুরোধ করছি, যোগ্যতা অনুযায়ী যেন চাকরি দেয়। রূপগঞ্জে যত ইন্ডাস্ট্রি, এর ত্রিশ শতাংশও যদি চাকরি দেয়, তাহলে রূপগঞ্জে আর বেকার সমস্যা থাকবে না। বেকারত্বের কারণেই ছিনতাই, সন্ত্রাসসহ নানা অপকর্ম বাড়ছে।

আমি চেম্বারের মাধ্যমে চেষ্টা করব যুবকেরা যেন অল্প ইন্টারেস্টে লোন পায়। কারণ বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সম্পদ হলো বাংলাদেশের নাগরিক। গত সরকার ২৬ হাজার কোটি টাকা নিয়ে গেল। তাহলে আমাদের যুবকেরা কেন পাবে না। আমি এগুলো করতে পারলে রূপগঞ্জে কোনো বেকার থাকবে না। তারা হয় চাকরি করবে নয়তো ব্যবসায়ী হয়ে উঠবে।

সড়ক, স্বাস্থ্য, শিক্ষায় ও অবকাঠামোগত উন্নয়নে অগ্রাধিকারমূলক প্রকল্প কী কী থাকবে আপনার পরিকল্পনায়?
দিপু ভূঁইয়া: রূপগঞ্জে দুটি পৌরসভা। একটি ‘এ’ ও একটি ‘বি’ ক্যাটাগরির। ‘এ’ ক্যাটাগরির পৌরসভায় আমরা আশা করি সোডিয়াম বাতি থাকবে, রাস্তা ও সুয়ারেজ ব্যবস্থা থাকবে। কিন্তু আফসোস, এটা ইউনিয়নের চেয়েও করুণ অবস্থায় আছে। হয় বাজেটের টাকা চলে যায়, নয়তো এগুলো লুট হয়ে যায়। তা না হলে এই তারাব পৌরসভা নারায়ণগঞ্জের চেয়েও সুন্দর হয়ে যাওয়ার কথা ছিল। যারা সেখানে নেতৃত্ব দিয়েছে, তারা রূপগঞ্জকে আপন করে নেয়নি। নয়তো রূপগঞ্জের রূপ চেঞ্জ হয়ে যেত।

রূপগঞ্জ থানার রাস্তাগুলোর বাজেটের টাকা কোথায় যায়, আমরা বলতে পারবো না। অনেক টাকা চলে যাচ্ছে। এই টাকাগুলো ভালোভাবে ব্যবহার করলে পাঁচ বছরে আর কাজ করার জায়গা থাকবে না।

কাকে আপনি আদর্শ হিসেবে মেনে নিতে চাচ্ছেন?
দিপু ভূঁইয়া: আমি আমার পরিবার থেকে দেখে এসেছি। তাদের থেকেই আমি আকৃষ্ট হয়ে রাজনীতিতে এসেছি। রাজনীতিতে এসে আমি তারেক রহমানকে দেখলাম। তিনি যেভাবে জনগণের সাথে মিশে কাজ করতেন। মানুষকে যেভাবে তিনি আপন করে নেন, সেটা দেখে আকৃষ্ট হয়েই আমি বিএনপিতে এসেছি।

নির্বাচিত হলে প্রথম একশো দিনে কোন তিনটি কাজ অগ্রাধিকার দেবেন এবং কেন?
দিপু ভূঁইয়া: রূপগঞ্জকে ঢেলে সাজাতে গেলে এটা একটা দীর্ঘ প্রক্রিয়া। পাঁচ বছরের ম্যান্ডেট হলে আমরা পাঁচ বছরের জন্যই কাজ করবো। তবে অগ্রাধিকার বলতে গেলে আমাদের অগ্রাধিকার হল স্বাস্থ্য, রাস্তাঘাটের কাজগুলো, বাচ্চারা স্কুলে যেন নিরাপদে যেতে পারে এমন একটা রূপগঞ্জ আমরা করার চেষ্টা করবো। তবে এটা শুধু আমরা একা পারবো তা না। রূপগঞ্জের নাগরিকেরা যখন সচেতন হবে, তখন আমরা এ ধরনের রূপগঞ্জ পেয়ে যাবো।

দলের নেতাকর্মীদের জন্য ও প্রতিদ্বন্দ্বীদের জন্য আপনার কী বার্তা থাকবে?
দিপু ভূঁইয়া: আমার ভোটার হোক বা রূপগঞ্জের বাসিন্দা হোক, যারা রূপগঞ্জের ভালো চায়, তাদের আমি বলবো— আমরা স্বপ্নের রূপগঞ্জ গড়তে চাই। দলমত নির্বিশেষে আমরা স্বপ্নের রূপগঞ্জ গড়বো। যেখানে হানাহানি, মাদক থাকবে না। রাস্তা হবে ঢাকা শহরের চেয়ে সুন্দর। ঢাকা থেকেও যেন বাচ্চারা পড়াশোনা করতে আসে এমন আধুনিক শহর গড়তে চাই।