বৃহস্পতিবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

|

আশ্বিন ২ ১৪৩২

Advertisement
Narayanganj Post :: নারায়ণগঞ্জ পোস্ট

সিটি পার্কে চুরি: খুঁটিসহ লাইট, ড্রেনের লোহার ঢাকনা উধাও!

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট

প্রকাশিত: ১১:২৪, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সিটি পার্কে চুরি: খুঁটিসহ লাইট, ড্রেনের লোহার ঢাকনা উধাও!

নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্ক (পূর্বনাম শেখ রাসেল পার্ক)

নারায়ণগঞ্জ শহরের দেওভোগ জিমখানা এলাকায় অবস্থিত নারায়ণগঞ্জ সিটি পার্ক (পূর্বনাম শেখ রাসেল পার্ক) একসময় নগরবাসীর জন্য ছিলো স্বস্তির জায়গা। প্রায় ১৮ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ পার্কটি নির্মিত হয়েছিলো ৫৭ কোটি ৬৭ লাখ টাকা ব্যয়ে, নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের অর্থায়নে। উদ্দেশ্য ছিলো নগরীর মানুষকে একটু হাঁটার জায়গা, পরিবার-পরিজন নিয়ে অবসর কাটানোর পরিবেশ এবং স্বাস্থ্যকর বিনোদনের সুযোগ দেওয়া। কিন্তু অল্প কয়েক বছরের ব্যবধানেই সেই পার্ক আজ নগরবাসীর কাছে অনিরাপদ ও আতঙ্কের জায়গা হয়ে উঠেছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পার্কে একের পর এক ছিনতাই ও চুরির ঘটনা ঘটছে। শুধু তাই নয়, মাদকসেবীদের আনাগোনা এবং নিরাপত্তাহীনতার কারণে সাধারণ মানুষ পার্কে যাওয়া নিয়ে ভাবতে শুরু করেছে।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, পার্কের ভেতরে যেন চুরির বিশাল এক কর্মযজ্ঞ চলছে। নিরাপত্তার জন্য প্রবেশপথে তৈরি লোহার দেয়াল থেকে রড খুলে নিয়েছে দুর্বৃত্তরা। মূল গেট থেকে শুরু করে ভেতরের বিভিন্ন ড্রেনের মোটা লোহার স্লাব একে একে তুলে নিয়ে গেছে চোরের দল। যে ড্রেনে এসব স্লাব থাকার কথা, সেগুলো এখন খোলা পড়ে থাকায় যেকোনো সময় দুর্ঘটনার আশঙ্কা দেখা দিচ্ছে। শিশুরা পড়ে গিয়ে হাত-পা কেটে রক্তাক্ত হচ্ছে অহরহ। শুধু তাই নয়, পার্কের সৌন্দর্য বাড়াতে বসানো হয়েছিলো বলাড লাইট সেগুলোও খুলে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। ফলে সন্ধ্যার পর অন্ধকারে ডুবে যায় পার্কের অধিকাংশ, যা ছিনতাইকারীদের জন্য নিরাপদ আশ্রয় তৈরি করেছে।

একই দৃশ্য পার্কের ভেতরের লেক ও সবুজ ঘেরা অংশে। রড, লোহার স্লাব, লাইট বক্স সব কিছুতেই চলছে চুরির উৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ, এগুলো একদিনে হয়নি। দীর্ঘদিন ধরে চুরি হলেও কর্তৃপক্ষের কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই।

পার্কে নিয়মিত যাতায়াতকারী নগরবাসীরা বলছেন, আগে যেখানে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হাঁটা, শরীরচর্চা ও বিনোদনের সুযোগ ছিলো, এখন সেখানে ভর করেছে আতঙ্ক।

পঞ্চাশোর্ধ স্থানীয় বাসিন্দা মোর্শেদ জামান বলেন, আগে এখানে এসে মন ভরে যেতো। পরিচ্ছন্ন পরিবেশে হাঁটাহাঁটি করে ক্লান্তি দূর করা যেতো। এখন চারপাশে শুধু মাদকসেবী আর ছিনতাইকারীর আনাগোনা। পরিবার নিয়ে আসার কথা চিন্তাও করা যায় না।

শিক্ষক মো. খলিলুর রহমান প্রায় ১২ বছর ধরে এ এলাকায় বসবাস করছেন। তিনি বলেন, পার্ক উদ্বোধনের পর থেকেই আমরা পরিবার নিয়ে নিয়মিত আসতাম। কিন্তু কয়েকদিন ধরে এমন একটা নিরাপত্তাহীন পরিবেশ তৈরি হয়েছে যে, এখানে ঢুকতেই ভয় লাগে। ছিনতাইয়ের ঘটনা প্রায়শই শোনা যায়। এতে পরিবার-পরিজন তো দূরের কথা, একা আসতেও ভয় লাগে।

চার দিন আগে পার্কের ভেতরে এক মেয়ের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ ছিনিয়ে পালিয়ে যাচ্ছিলো দুর্বৃত্তরা। ঘটনাচক্রে তারা পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। কিন্তু এর পরও পার্কের নিরাপত্তা জোরদার হয়নি। স্থানীয়রা বলছেন, একটি ঘটনার পরপরই নিরাপত্তা জোরদার করার কথা থাকলেও বাস্তবে কিছুই করা হয়নি।

এদিকে চুরির দৃশ্যও ধরা পড়েছে সরেজমিনে। দেখা গেছে, পার্ক থেকে দুই কিশোর ছোট ট্রলিতে করে তিনটি অ্যালুমিনিয়াম এলইডি লাইট বক্স নিয়ে যাচ্ছে। জিজ্ঞাসা করলে তারা জানায়, পার্ক কর্তৃপক্ষই তাদের দিয়ে লাইট খুলে নিতে বলেছে। যাতে চোরেরা নিয়ে যেতে না পারে। বিষয়টি আবার নতুন প্রশ্ন তৈরি করেছে, মাথা ব্যথার জন্য কি মাথাই কাটাই সমাধান?

পার্কের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের পরিচ্ছন্ন সুপারভাইজার মো. সজল জানান, নিরাপত্তা কর্মীর অভাবেই দীর্ঘদিন ধরে লোহার স্লাব চুরি হচ্ছে। জানুয়ারিতেই নাসিককে লিখিতভাবে এ বিষয়ে জানানো হয়েছিলো। বুধবার আবার লাইট চুরির খবর জানানো হয়েছে। কিন্তু আগের অভিযোগে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।

স্থানীয়দের মতে, পার্কের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব অবহেলা ও নাসিকের অনিহাই এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। তাদের বক্তব্য, এটি যদি ব্যক্তিগত টাকায় তৈরি পার্ক হতো, তবে অনেক আগেই এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হতো। সরকারি অর্থে তৈরি হওয়ায় এখন আর কেউ দেখছে না।

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ জাকির হোসেন বলেন, পার্কে চুরি হওয়ার বিষয়ে আমরা অভিযোগ পেয়েছি। আজই প্রশাসকের সাথে মিটিং হয়েছে। দ্রুত নিরাপত্তা প্রহরী বৃদ্ধি করা হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে নজরদারি বাড়াতে বলা হবে। তবে লাইট খোলা প্রসঙ্গে আমার জানা নেই। কারা এমন করছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।