
একেএম শামীম ওসমান
নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান বলেছেন, ২১ বার শেখ হাসিনাকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমাদের স্বপ্নটাকে বাঁচিয়ে রাখুন, এটাই আমাদের স্বপ্ন। অক্টোবর নাগাদ ওরা মানচিত্রে থাবা দিবে। ক্ষমতায় আসার জন্য নয়, বাংলাদেশকে ধ্বংস করার জন্য ওরা এটা করবে।
শনিবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বিকেলে শহরের ২ নং রেলগেট এলাকায় নারায়ণগঞ্জ ৪ আসনের সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমানের সভাপতিত্বে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল।
শামীম ওসমান বলেন, যারা বাংলাদেশকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করতে চায় তাদের বলতে চাই আমরা কারও পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়াইনি। বাংলাদেশ শেখ জাসিনার নেতৃত্বে নিজের পায়ে ভর দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
১৯৮১ সালে এই পার্টি অফিসে ঢুকে মনির ভাইকে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা বিচার পাইনি। নিজের এই হাত দিয়ে নারায়ণগঞ্জ শহরে পঞ্চাশটা লাশ দাফন করেছি। অনেককেই কবরস্থানে নিয়ে যেতে পারিনি। শেখ হাসিনা যখন বাংলাদেশকে উন্নয়নের শিখরে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে সেই সময় দেশি বিদেশিরা শেখ হাসিনাকে হত্যার পরিকল্পনা করছে। ওই বেইমান শকুনরা ষড়যন্ত্র করছে।
বোমা হামলার পর আমি বুঝিনি যে আমি বেঁচে আছি। আমাদের কী অপরাধ ছিল। খালেদা জিয়া বলেছিল পার্লামেন্টে আমাকে দেখে নেবেন। আমরা প্রতিবাদ করেছিলাম। ত্রিশ লক্ষ শহীদের রক্তে রঞ্জিত বাংলাদেশ এই নারায়ণগঞ্জে আমাদের যারা ৭৫ এর পর বড় হয়েছি আমাদের জীবন প্যালেস্টাইনের যুবদকদের মত হয়ে গিয়েছিল।
আমরা তোলারাম কলেজের ছাত্র ছিলাম। উনিশ জন ছাত্র দাঁড়িয়ে স্লোগান দিয়েছি। তোলারাম কলেজে ঢুকতে পারেনি ওরা। হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক ওরা ষড়যন্ত্র করছে। সাথে আছে কিছু মোশতাক। এই বাংলাদেশে এখনও ওরা কথা বলে। আমি লজ্জা পাই। সেকারণেই আমরা গোলাম আযমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছিলাম। নেত্রী আমাকে ঢাকা নিয়ে বলল তুমি নারায়ণগঞ্জ যাবে না। তোমাকে মেরে ফেলা হবে। আমরা ভেবেছিলাম ওরা সামনে থেকে আসবে। কিন্তু ওরা পেছন দিয়ে এসেছে। আওয়ামী লীগ অফিসে বোমা ফোটানো হল। বিশজন লোক সাথে সাথে মারা গেল। আমি ভেবেছিলাম কবরের আযাব শুরু হয়েছে। আমাদের বন্ধু, সন্তানদের রক্ত এত গরম ছিল। হাসপাতালে আমাদের বারবার জিজ্ঞেস করছিল তখনও নিজের কথা বলিনি বলেছিলাম শেখ হাসিনাকে বাঁচান।
নারায়ণগঞ্জে অনেকে আওয়ামী লীগ সাজতে চান কিন্তু বিএনপি জামাতের বিরুদ্ধে নামে না। মোশতাক বঙ্গবন্ধু হত্যার পর আমাদের বাসায় ফোন করেছিল। আমার মা সেদিন খুনী মোশতাককে বলেছিলেন সে (শামীম ওসমানের বাবা) যদি আপনার মন্ত্রী সভায় যোগ দেয় প্রথমে চেষ্টা করবো তাকে হত্যা করতে নয়ত নিজে আত্মহত্যা করবো। আমি সেটার সাক্ষী। মনসুর আলী যে রুমে ছিল আমার বাবাও সেখানে ছিলেন। তাকে অযু পর্যন্ত করতে দেয়নি৷
আমাদের রাজনীতি করার কথা ছিল না। বঙ্গবন্ধু বেঁচে থাকলে আমরা জাপানের চেয়েও উন্নত দেশ থাকতাম। বঙ্গবন্ধু আওয়ামী লীগের সম্পদ ছিল না। শেখ হাসিনাও আজ শুধু আওয়ামী লীগের সম্পদ না। আমাদের বাচ্চার ভবিষ্যত শেখ হাসিনা। আজকেও আমি বলতে চাই আমাদের চাওয়া পাওয়ার কিছু নেই।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা দেশে ফিরে দুহাত উপরে তুলে কাঁদছিল। বলেছিল, আমার বাবা মাকে যেখানে মেরেছ সেখানে দু রাকাত নফল নামাজ পড়তে চাই। তারা সেখানে নফল নামাজ পড়তে দেয়নি। যারা আমাদের জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছে, তাদের সাথে গণতন্ত্র চর্চা করতে পারবো না৷ আমরা আমাদের বাংলাদেশকে বাঁচাতে চাই।
এসময় জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল হাই, সাধারণ সম্পাদক আবু হাসনাত শহিদ মো: বাদল, মহানগর আওয়ামীলীগের সিনিয়র সহ সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান চন্দন শীল, সাধারণ সম্পাদক খোকন সাহা, সোনারগাঁ থানা আওয়ামীলীগের সভাপতি কায়সার হাসনাত, মহানগর যুবলীগের সভাপতি শাহাদাৎ হোসেন ভূইয়া সাজনু, মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হাবিবুর রহমান রিয়াদ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।