
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সবচেয়ে ভয়াবহ সময় ছিল ১৯ জুলাই থেকে ২৫ জুলাই পর্যন্ত। এসময় ইন্টারনেট বন্ধ করে ও শহরজুড়ে কারফিউ জারি করে বর্বর গণহত্যা চালানো হয়। শুধু রাজপথে নয় বাড়ির বারান্দায়, ঘরে বসে ও ছাদে থেকেও গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায় অনেকে।
আন্দোলনের উত্তাল সেই সময়ে শহরের আকাশে অনেক নিচ দিয়ে উড়তে দেখা গেছে হেলিকপ্টার। এসকল হেলিকপ্টার থেকে স্নাইপার দিয়ে ছোঁড়া হয় গুলি। এছাড়াও ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ির ছাদে স্নাইপার বসিয়ে আন্দোলনকারীদের হত্যা করা হয়।
২০২৪ সালের ২১শে জুলাই বাদ আসর বাচ্চাকে ঘুম পাড়িয়ে বারান্দায় যায় সুমি। বাড়ির ছয়তলার সেই বারান্দায় আগে থেকেই তার মা আছমা বেগম দাঁড়িয়েছিলেন। হঠাৎ একটি গুলি এসে সিমুর মাথায় লাগে। মুহূর্তেই লুটিয়ে পড়ে সে। নির্মম ঘটনাটি ঘটে কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পাইনাদী নতুন মহল্লা দোয়েল চত্বর এলাকায়।
মেয়েকে পড়ে যেতে দেখে দৌড়ে এসে মা আছমা বেগম বলে উঠেন ও মা, ও মা কি হয়েছে। কিন্তু কোনো সাড়া-শব্দ নেই। রক্তে ভেসে যাচ্ছে ফ্লোর। চোখের পলকে সুমির নিথর দেহ জানান দেয় সে আর নেই। চিরদিনের জন্য পৃথিবীর মায়া ছেড়ে গেছে। মাকে মা বলে ডাকার আগেই মা-হারা হয়ে যায় তার আড়াই মাসের সুয়াইবা। সিমুও তার আদরের সন্তানের মুখে মা ডাক শুনতে পারলেন না।
জানা যায়, সেদিন সকাল থেকেই ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সিদ্ধিরগঞ্জের শিমরাইল মোড় থেকে সাইনবোর্ড পর্যন্ত সড়ক জুড়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংঘাত চলছিল। সারাদিন টিয়ারশেল, গুলি ও সাউন্ড গ্রেনেডের বিকট শব্দে আতঙ্ক বিরাজ করছিল সর্বত্র।
এছাড়াও ১৯ জুলাই শামীম ওসমান সশস্ত্র বাহিনী নিয়ে শহরে গুলিবর্ষণ চালানোর সময় নয়ামাটি এলাকায় বাড়ির ছাদে বাবার কোলে গুলিবিদ্ধ হয় শিশু রিয়া গোপ। পরবর্তীতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় শিশুটি।
এছাড়াও আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন জায়গায় বাড়ির ভেতরেও গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হন অনেকে। হেলিকপ্টার থেকে ছোঁড়া গুলি ও স্নাইপারের গুলিতে ঢাকা চট্টগ্রাম মহাসড়ক এলাকায় অনেক হতাহতের ঘটনা ঘটে।