
ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ উপজেলার আষাঢ়িয়ারচর ও আশপাশের এলাকায় গড়ে উঠেছে একের পর এক অবৈধ চুন ও ঢালাই কারখানা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এসব কারখানা নিয়ন্ত্রণ করছে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা। প্রতিদিন কোটি টাকার সরকারি গ্যাস অবৈধভাবে ব্যবহার করলেও প্রশাসনের কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেই।
স্থানীয় সূত্র বলছে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পাশেই, তিতাস গ্যাসের সোনারগাঁ জোনাল অফিস থেকে অল্প দূরত্বে স্থানীয় প্রভাব আব্দুর রউফ ও তার ভাই আব্দুল জলিলের বাড়ির পাশে একটি বড় চুন কারখানা চালু রয়েছে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, কারখানাটির দৈনিক গ্যাস ব্যবহার দেড় থেকে দুই লাখ টাকার সমপরিমাণ। ফলে মাসে গড়ে প্রায় ১০ কোটি টাকার সরকারি গ্যাস অবৈধভাবে খরচ হচ্ছে।
যদিও আব্দুর রউফ দাবি করেছেন, তিনি কোনো অবৈধ কারখানা গড়ে তোলেননি, তার কোন চুনের কারখানা নেই। একই কথা বলছেন তার ভাই জলিলও।
কিন্তু এলাকার মানুষ জানাচ্ছেন, তাদের প্রত্যক্ষ নিয়ন্ত্রণেই কারখানাগুলো চলছে।
স্থানীয় আবুল হোসেন ও শফিকুল ইসলাম জানান, এখানে ২০টিরও বেশি কারখানা হয়েছে। বাসাবাড়িতে গ্যাস পাওয়া যায় না, রান্না-বান্না বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিবাদ করলে হামলার শিকার হতে হয়।
শুধু আষাঢ়িয়ারচর নয়—গঙ্গানগর, পিয়ারনগর, ইসলামপুর, প্রতাপেরচর, পিরোজপুর, রতনপুর, ভবনাথপুর, দুলালপুর, চেঙ্গাইন, সাদীপুর, জামপুর ও মোগরাপাড়া ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামেও একই চিত্র। প্রতিটি কারখানাই চলছে অবৈধ সংযোগে, কেউ ঢালাই করছে, কেউ চুন উৎপাদন করছে।
এলাকার পরিবেশের উপর পড়ছে ভয়াবহ প্রভাব। পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চুন কারখানায় পাথর গলানোর ফলে বাতাসে সিসার মাত্রা বেড়ে যায়। এতে শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগসহ নানা রোগ ছড়াচ্ছে। পাশাপাশি জমির উর্বরতাও নষ্ট হচ্ছে, ফসল উৎপাদন কমে যাচ্ছে।
তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশের অভিযোগও তুলেছেন স্থানীয়রা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কারখানা মালিক বলেন, প্রতি মাসে তিতাসের ভেতরের লোকদের মাসোহারা দিই। হঠাৎ কোনো ভ্রাম্যমাণ আদালত এলে আগেই খবর পেয়ে যাই। দুই-তিন দিনের মধ্যেই আবার ভাট্টি চালু হয়ে যায়।
তিতাসের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী রাজীব কুমার সাহা বলেছেন, যদি প্রমাণ পাওয়া যায় যে আমাদের কোনো কর্মকর্তা এতে জড়িত, অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মোবারক হোসেন জানান, আমরা একাধিকবার অভিযান চালিয়ে এসব ভাট্টি ভেঙে দিয়েছি। কিন্তু কিছুদিনের মধ্যে আবার তারা নতুন ভাট্টি গড়ে তোলে।
তবে স্থানীয়দের প্রশ্ন, কোটি কোটি টাকার গ্যাস চুরি, পরিবেশ ধ্বংস আর জনদুর্ভোগ চললেও প্রশাসন কেন এতোটা নিরব ভূমিকা পালন করছে?