ফাইল ছবি
নারায়ণগঞ্জ-৪ (ফতুল্লা) আসনটি আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোট শরীক হিসেবে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামকে ছাড় দিতে পারে বিএনপি এমনটি চাউর হলেও শেষ পর্যন্ত তা ধানের শীষের কারো কাছেই থাকবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জোটের প্রার্থী হিসেবে জমিয়তের যুগ্ম মহাসচিব মনির হোসাইন কাসেমীর নাম শোনা গেলেও নানা কর্মকান্ডে কিছুটা পিছিয়ে পড়েছেন তিনি। তবে জোটের প্রার্থী হলে বিএনপির জন্য এ সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী হবে।
নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আসন হিসেবে চিহ্নিত নারায়ণগঞ্জ-৪। এর আগে এ আসনে এমপি ছিলেন আওয়ামী লীগের গডফাদার খ্যাত শামীম ওসমান। তবে আসনটি বরাবরই বিএনপির শক্তিশালী ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। এ আসনে বিএনপির বিশাল ভোটব্যাংক রয়েছে, যারা গত সতেরো বছর ভোটাধিকার বঞ্চিত ছিল। আসনটি জমিয়তকে ছাড়লে এই অঞ্চলে বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এতে দলটি দীর্ঘদিন যাবৎ বিদ্যমান তার 'কোর ভোটব্যাংক' হারাতে পারে।
অতীতের নির্বাচনগুলো পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যেই দলই নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনে বিজয় লাভ করে সেই দলই সরকার গঠন করে। এছাড়াও ফতুল্লায় বিসিক শিল্পাঞ্চল অবস্থিত। ফলে অন্যান্য আসনের তুলনায় এর গুরুত্বও অনেক বেশি।
বিগত আন্দোলন সংগ্রামে শামীম ওসমানের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে এই অঞ্চলের নেতাকর্মীরা আন্দোলন সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। ফতুল্লা থানা বিএনপির সভাপতি শহীদুল ইসলাম টিটু, যিনি আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে চোখ হারিয়েছিলেন কিংবা জেলা ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি ও গুমের শিকার হয়ে ফিরে আসা মশিউর রহমান রনি। দুজনেই ফতুল্লা এলাকা থেকে উঠে এসেছেন। এমন অনেক নেতাই এই এলাকায় বিএনপির ঝান্ডা ধরে রেখেছেন ফ্যাসিবাদের আগ্রাসন মোকাবিলা করে। ফলে এই এলাকায় দলীয় নেতাকর্মীদের উপেক্ষা করে জোটের প্রার্থী চাপিয়ে দেয়া বিএনপির জন্য অতটা সহজ হবে না।
এছাড়াও ভৌগলিকভাবে এই এলাকার রাজনৈতিক গুরুত্বও অনেক। ঢাকার উপকন্ঠে অবস্থিত ফতুল্লা এলাকা। ঢাকার অন্যতম প্রবেশপথ সাইনবোর্ডও এই এলাকার অংশ। ফলে রাজনৈতিক ভাবেও এই এলাকার গুরুত্ব অনেক বেশি।
ধানের শীষের প্রার্থী না থাকলে এই এলাকায় বিএনপি কিংবা বিএনপিমনা একাধিক নেতা স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে পারেন। প্রার্থী একজন হলে স্বতন্ত্র প্রার্থী বিজয়ী হবে। কিন্তু একাধিক স্বতন্ত্র প্রার্থী দাঁড়ালে এ আসনে জামায়াত বিজয়লাভ করতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত ফতুল্লায় বিএনপির হেভিওয়েট নেতা শাহ্ আলম ও সাবেক বিএনপি নেতা ও এমপি মোহাম্মদ আলীর নাম শোনা যাচ্ছে।
বিএনপির তৃণমূল নেতাকর্মীরা বলছেন, একবার আসনটি জোটে চলে গেলে পুনরায় এটি ফিরে পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব। অন্যদিকে জামায়াত জিতে গেলে এই এলাকায় জামায়াতের রাজনৈতিক উত্থানকেও বিএনপির মোকাবিলা করতে হবে যা দল হিসেবে বিএনপির জন্য চ্যালেঞ্জিং। সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারলে এই এলাকায় বড় অস্তিত্ব সংকটে পড়তে পারে বিএনপি।
এ আসনে জামায়াতে ইসলামীর প্রার্থী হিসেবে মাঠে আছেন মাওলানা আব্দুল জব্বার। জব্বার ইসলামী ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি ও নারায়ণগঞ্জ মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমীর। নারায়ণগঞ্জের পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনেই জামায়াত সবচেয়ে শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নিয়মিত নির্বাচনী প্রচারনা চালিয়ে ইতিমধ্যে নির্বাচনী এলাকায় ব্যাপক আলোড়ন তৈরি করেছেন জব্বার। নির্বাচনের বিষয়ে তিনি জানান, আমরা একটি সুষ্ঠু ও সুন্দর নির্বাচন চাই। এর জন্য প্রশাসনকে কঠোর ও নিরপেক্ষ হতে হবে।
এছাড়াও মাঠে আছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) প্রার্থী আব্দুল্লাহ আল আমিন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনী এলাকার বিভিন্ন স্থানে আমাদের পোস্টার ব্যানার ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। আমার কর্মীরা আহতও হয়েছে। আমি লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিয়ে শঙ্কিত আছি।
মাঠে আছেন ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী মুফতি ইসমাইল সিরাজি আল মাদানী। নিয়মিত নিজ এলাকায় প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন তিনি।

